[gtranslate]

বেড়েছে গরুর মাংস-মুরগি-ডিম ও সবজির দাম


ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২, ১:১১ অপরাহ্ণ / ২২৩
বেড়েছে গরুর মাংস-মুরগি-ডিম ও সবজির দাম

ঢাকাঃ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে গরুর মাংস, ডিম, মুরগীসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী।

তবে কমেছে আলুর দাম। এছাড়াও অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম।

শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা।

মুরগির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম এক মাসের বেশি সময় ধরে কমছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগির কেজি দুইশো টাকা হয়েছিল। এখন তা কমে দেড়শো টাকা হয়েছে। তবে আমাদের ধারণা আবার যেকোনো সময় দাম বেড়ে যেতে পারে।

রামপুরা বাজার থেকে মুরগি কেনা মো. মহাসিন বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজি দেড়শো টাকা করে নিয়েছে। গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা কেজি কিনেছিলাম। সে হিসাবে কেজিতে দাম ১০ টাকা কমেছে। তবে আমাদের হিসেবে মুরগির দাম এখনো বেশি। মুরগির কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা থাকলে সেটাই স্বাভাবিক।

রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে শসা কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এরপর রয়েছে বেগুন। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দামও কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে বেশি দাম বেড়েছে ইলিশের। ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এরপর বেশি দাম বেড়েছে চিংড়ির ৫০-৭০ টাকা।

সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, আলু-মরিচ এবং ধনিয়াপাতা ছাড়া পাইকারি বাজারে সব সবজির দাম বেড়েছে এ সপ্তাহে। তাই খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

তার দাবি, পাইকারি বাজারে টমেটোর দাম গত সপ্তাহে ২০ টাকা থাকলেও গতকাল রাতে সেটা ২৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। শিম গত সপ্তাহে ২৫ টাকা ছিল। আজ দাম বেড়ে ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি গত সপ্তাহে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে শসার। গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শসার দাম ৩০ টাকা ছিল। আজ সেই শসা ৫০ টাকা অতিক্রম করেছে।

এ বিক্রেতা আরও বলেন, এখন আবারও সবজির দাম বাড়তে থাকবে। কারণ শীতকালীন সবজির উৎপাদন এখন প্রায় শেষের দিকে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে পাকা টমেটোর দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এর সঙ্গে বেড়েছে শিমের দাম। মানভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৬০ টাকা। তবে আগের দামেই ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গাজর।

শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা। শালগমের (ওল কপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এ দুটি সবজির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালং শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব সবজি ও শাকের দামে খুব একটা হেরফের হয়নি।

সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ফজলুল ব্যাপারী বলেন, কম দামে সবজি খাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে সবজির দাম কমার সম্ভাবনা কম। আমাদের ধারণা এখন দিন যত যাবে সবজির দাম বাড়বে।

খিলগাঁও থেকে সবজি কেনা ফাতেমা বেগম বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। চাল, তেল, চিনির দাম শুনলে মাথা গরম হয়ে যায়। মাসের পর মাস অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের পণ্য। কিন্তু দাম কমানোর কোনো পদক্ষেপ কেউ নিচ্ছে না। দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে দাম।

তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম তাতে আমাদের মতো স্বল্পআয়ের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। দেখেন এ শীতের মধ্যেও বাজারে সবধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক। বাজারে একশো টাকা নিয়ে গেলে দুই-তিনটির বেশি সবজি কেনা যায় না।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।

এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি।

সেগুনবাগিচা বাজারে সপ্তাহের সদাই করতে এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম রাসেল। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পালন শাকের আঁটি কিনেছি ১০ টাকা করে। আজ সেটা দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকায়। লাক শাক গত সপ্তাহে ১০ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। আজ ১৫ টাকা দিয়ে কিনতে হলো।

সেগুনবাগিচার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল আলম জানান, চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহ না থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে ইলিশের দাম কেজিতে ১০০ টার মতো বেড়েছে।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ইলিশ ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ সেটা ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর চিংড়ি ৫৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে আজ। গত সপ্তাহে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া রুই, কাতল, টাটকিনি, শিং, কইসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মতো বেড়েছে। তবে সাগরের মাছের দাম আগের মতোই আছে।